বর্তমানে আমরা প্রযুক্তি এর উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। এতটাই নির্ভরশীল যে কিছু কিছু প্রযুক্তি ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত ভাবতেও পারি না। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি কম্পিউটার, মোবাইল, রাউটার, ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক লাইট ইত্যাদি যেগুলোর সুবিধা যেমন আছে তেমনি আছে অসুবিধা। আমরা সচরাচর সুবিধাগুলোর ব্যাপারেই জানার চেষ্টা করি এবং ধারণা রাখি। কিন্তু অসুবিধাগুলো নিয়ে আমরা খুব কম মানুষই সচেতন। 

আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তুটি রাউটারকেন্দ্রিক, যা ছাড়া আমাদের অনেক কাজ ই থমকে যাবে। দৈনন্দিন জীবনে রাউটারের অবদান অনেক হলেও এর কিছু কিছু দিক নিয়ে আমরা অনেকেই জানি না, ধারণা রাখি না। বলা যায় আমরা কখনো এইসব দিক নিয়ে চিন্তা ভাবনাও করি নাই। এইরকম একটি বিষয় হচ্ছে রাউটার দ্বারা নিঃসৃত রেডিয়েশন, যা নিয়ে আমরা একদম অসচেতন। 

রাউটারের রেডিয়েশন নিয়ে কথা বলার আগে আমরা বলে রাখতে চাই, যে কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস রেডিয়েশন নিঃসরণ করে। তাহলে প্রথমে জানতে হয় রেডিয়েশন আসলে কি?

রেডিয়েশন কি?

রেডিয়েশন এর বাংলা হল তেজস্ক্রিয়তা অথবা বিকিরণ। রেডিয়েশন হচ্ছে এমন এক ধরণের শক্তি যা তরঙ্গ অথবা কণা হিসেবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যায়। এটি বস্তু ভেদ করে চলাচল করতে সক্ষম। আমরা যদি কয়েকটি উদাহরণ দেখে নেই, 

একটি জ্বলন্ত মোমবাতি তাপ এবং আলোর আকারে রেডিয়েশন নির্গত করে।

সূর্য আলো, তাপ এবং কণা আকারে রেডিয়েশন নির্গত করে।

রেডিয়েশন এর প্রকারভেদ রয়েছে। রাউটার রেডিয়েশন নিয়ে কথা বলার আগে এই বিষয়টিও আমাদের জানতে হবে।

রেডিয়েশন এর ধরণ

রেডিয়েশন প্রধানত তিন প্রকার।

Non- Ionizing Radiation (নন-আয়নাইজিং বিকিরণ)

Ionizing radiation (আয়নাইজিং বিকিরণ) 

Neutrons (নিউট্রন)

নন-আয়নাইজিং বিকিরণ সবচেয়ে নিম্ন স্তরের রেডিয়েশন। এটি সাধারণত বাকি ২ ধরণের রেডিয়েশন আলাদা। বাকি ২ ধরণের রেডিয়েশন পরমাণু বা অণু থেকে ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। কিন্তু নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন টা করতে পারে না। কিন্তু এই রেডিয়েশনের শক্তি সেই অণুগুলিকে কম্পিত করতে পারে এবং তাই তাপ উৎপন্ন হয়। আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস এর বেশির ভাগ নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন নির্গত করে। 

রাউটার রেডিয়েশন

রাউটার বা ওয়াইফাই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের মাধ্যমে ডেটা পাঠায়। যখন আমাদের ওয়াইফাই রাউটার ডেটা প্রেরণ করে, তখন এটি ইএমএফ(Electro Magnetic Field) নির্গত করে যা শরীর শোষণ করতে পারে। এটি এক ধরণের নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন। 

একটি উদাহরণ দিলে হয়তো বুঝে যাবেন। 

আপনার মোবাইল পকেটে রয়েছে। হঠাৎ মোবাইল পকেট থেকে বের করলেন এবং খেয়াল করলেন যে শরীরের সেই অংশটি অথবা সেই অংশের কাপরে গরম অনুভব করছেন। এর কারণ রেডিয়েশন। আমরা অনেকেই হয়তো খেয়াল করি না এটা। কিন্তু আসলে এমন টা সচরাচর ঘটে থাকে। আর যদি ফোনটি সস্তা অথবা লো-কোয়ালিটি হার্ডওয়্যার কম্পোনেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে তাহলে রেডিয়েশন এর মাত্রা আরো বেশি হয়ে থাকে।  

আর এজন্যই স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা ঘুমানোর সময় মাথার কাছ থেকে মোবাইল দূরে রাখতে বলে। আপনি নিজের এবং আপনার ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে যত বেশি দূরত্ব রাখবেন, আপনার শরীরে বিকিরণ কম হবে। 

রাউটার এর ক্ষেত্রেও একি বিষয়। আপনার রাউটারটিও যদি সস্তা অথবা লো-কোয়ালিটির কোন কম্পোনেন্ট দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রেও এর রেডিয়েশন বিকিরণ পরিমানের থেকে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আপনি রাউটার এর কাছে থাকলে বেশ কিছুক্ষণ পর এই বিষয়টি খেয়াল করতে পারবেন। কিন্তু এই রেডিয়েশন কি আমাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে? কিন্তু এর আগে আপনাকে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

রাউটার রেডিয়েশন নিয়ে খেয়াল রাখার বিষয়গুলো

রেডিয়েশন এর প্রভাবের কথা বলার আগে আপনাকে কয়েকটি বিষয় আমাদের নজর রাখতে হবে।  

সিগনালের শক্তি

আপনার শরীর একটি ওয়াইফাই ডিভাইসের কতটা কাছাকাছি

আমরা এখন বেশিরভাগ ইউজারই শক্তিশালী রাউটার ব্যবহার করে থাকি। সেক্ষেত্রে আমাদের উচিৎ খোলা জায়গায় রাউটারটি প্লেস করা। বদ্ধ জায়গায় রাউটার প্লেস করলে রেডিয়েশন নির্গত হয়ে তা ঐ জায়গায় জমে আমাদের ক্ষতি এর কারণ হতে পারে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে রাউটার এর থেকে যতটা সম্ভব নিজের শরীর কে দূরে রাখা। 

যদিও রাউটারের রেডিয়েশন আমাদের জন্য ক্ষতিকারক নয় বলা হয়ে থাকে কিন্তু তবুও এটি একটি আলোচনার বিষয়। 

রাউটার রেডিয়েশনের প্রভাব

বেশি সময় ধরে যদি আমাদের শরীরে এই শক্তি উপস্থিত থাকে অথবা আমরা যেই পরিবেশে আছি সেখানে এই রেডিয়েশন প্রায় সময় অধিক পরিমান অবস্থান করে তাহলে তা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এইরকম রেডিয়েশনে ত্বক সবচেয়ে বেশি ঝুকিগ্রস্ত হয়। রাউটারের নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন ত্বক ক্যান্সার এর ঝুকি বাড়ায়। 

ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি আরো ক্ষতিকর। কারণ তাদের তখন বাড়ন্ত বয়স এবং তাদের শরীর খুবই সেনসিটিভ হয়ে থাকে। যদি রেডিয়েশন এর জন্য কোন কারণে শরীরের ডেভেলপমেন্ট বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে তা পরবর্তীতে বিপজ্জনক হতে পারে।

তাছাড়াও রাউটার রেডিয়েশন নিয়ে গবেষণা প্রায় সময়ই প্রাণীদের নিয়ে হয়েছে এবং দেখা গেছে এইরকম রেডিয়েশন প্রাণীগুলোর হার্ট, প্রজনন, বুদ্ধিগত সমস্যা সৃষ্টি করেছে যা খুবই উদ্বেগ একটি বিষয়। 

করনীয়

নিজেদেরকে সুস্থ ও রেডিয়েশন নিয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনা থেকে দূরে থাকতে আমাদের বেশ কিছু করনীয় বিষয় রয়েছে। 

রাউটার এর রেডিয়েশন লেভেল আমাদের চেক করা উচিৎ।

খোলা জায়গায় রাউটার প্লেস করা উচিৎ। 

লো রেডিয়েশন নির্গমন করে এমন ভালো মানের রাউটার কেনা উচিৎ। 

রাউটার থেকে শরীরের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা উচিৎ। 

পরিশেষে বলতে হয়, স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা সবসময় সচেতন থাকব। কারণ স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।