"Mesh" রাউটার আসলে কি? একটি সাধারন রাউটারের বিবেচনায় কি এক্সটা ফ্যাসিলিটি প্রোভাইড করে থাকে এটি আমাদের কে?

আমাদের অনেকেরই ধারণা, বিশাল সাইজের বাড়িতে, কিংবা বিশাল সাইজের অফিসস্পেসে বা বড় কোনো জায়গাজুড়ে সবখানে যদি ওয়াই-ফাই সিগন্যাল পেতে হয় তাহলে হয়তো লম্বা লম্বা অ্যানটেনাযুক্ত বড় রাউটারের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের এমন ধারনা একদম ই ভুল। আপনি যদি বড় বাসা কিংবা বিশাল অফিস স্পেসের পুরোটা জুড়ে নিরবচ্ছিন্ন ওয়াই-ফাই সিগন্যাল চান, তাহলে ‘মেশ’ রাউটার হতে পারে আপনার জন্য এক সহজ সমাধান।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, কি এই মেশ রাউটার, কি এর কাজ, কেন এটি যেকোনো এভারেজ রাউটারের থেকে ভিন্ন? আর আদেও কি একটা সাধারন রাউটারের থেকে এটা বেটার কাজ করে কিনা এমন ধরনের সব প্রশ্ন। আজ এসব কিছুই তুলে ধরার চেষ্টা করবো আপনাদের সামনে।

মেশ রাউটার মূলত কি?

সাধারনত একটি ‘মেশ’ নেটওয়ার্ক হলো কয়েকটি কানেক্টিভিটি ডিভাইসের একটি গ্রুপ, যেমন ওয়াই ফাই রাউটার, যা একটি একক নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে। এটি মূলত ইন্টারনেটের গেটওয়ের সাথে সংযোগকারী একটি ডিভাইসের পরিবর্তে একাধিক Wi-Fi নোড থেকে জাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে যা সমস্ত ওয়েব কানিক্টিভিটি প্রদান করে। 

মেশ রাউটার মূলত আকারে ছোট, কিন্তু এটি একের অধিক নোডস মিলে একসঙ্গে কাজ করে। সাধারনত বেশ কয়েকটি নোডস মিলেই একটি পুরো মেশ ওয়াই-ফাই সিস্টেম পরিচালিত হয়। নোড সাধারণত ‘রেঞ্জ এক্স টেন্ডার এর মতো কাজ করলেও এটি কোনো আলাদা সংযোগ তৈরি করে না। সেক্ষেত্রে একটি নোডের রেঞ্জ থেকে আরেকটি নোডের রেঞ্জে প্রবেশ করলে কোনো নেটওয়ার্ক ড্রপের আশঙ্কা থাকে না। ন্যূনতম দুটি নোড থেকে শুরু হলেও কাভারেজের বিস্তৃতি অনুসারে নোডের পরিমাণ নির্ধারিত হয়। কিছু মেশ সিস্টেম ৩২টি নোড পর্যন্ত সাপোর্ট করে। তবে ঠিক কতগুলো নোড আপনার প্রয়োজন তা আপনাকে কাভারেজের প্রয়োজন বুঝেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই মেশ রাউটারের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের এডভান্স ফিচারস, একে একে এগুলো নিয়ে একটি সুস্পষ্ট ধারনা দেয়ার চেষ্টা করবো আপনাদের কে।

  • ডেড জোন কিলার –

সাধারনত, ‘ডেড জোন’ হলো ঘরের বা বাইরের সে সমস্ত জায়গা, যে জায়গা গুলোতে ওয়াই-ফাই এর সিগন্যাল পৌঁছায় না। কিন্তু এই মেশ রাউটার কে বলা হয় ডেড জোন কিলার। এটি ঘর কিংবা অফিসের প্রতিটি ডেড জোনে সিগন্যাল পৌঁছে দেয় নিরবচ্ছিন্নভাবে। একের বেশী নোডসে ভাগ করা থাকে বলে সমস্তখানে সিংন্যাল পৌঁছানো বেশ সহজ হয়।

  • সিমলেস নেটওয়ার্ক –

 বাসায় কিংবা অফিসের কোনো স্থানে যখন ওয়াই ফাই সিগন্যাল পৌঁছায় না   তখন আমরা রেঞ্জ এক্সটেন্ডর কিনে ওই স্থানে স্থাপন করি। এই রেঞ্জ এক্স টেন্ডার এর কারনে ওই ডেড জোন গুলোতে নেটওয়ার্ক পাওয়া গেলেও তৈরি হয় নতুন সমস্যার। রেঞ্জ এক্স টেন্ডারের নেটওয়ার্কের আওতায় এলে দেখা যায় আপনার ব্যবহৃত ইন্টারনেট ডিভাইসটি মূল রাউটারের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নতুন যোগাযোগ স্থাপন করে রেঞ্জ এক্স টেন্ডারটির সঙ্গে। সে ক্ষেত্রে ইন্টারনেট-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় এবং পুনরায় সংযোগ স্থাপন করে। আর ওই মুহূর্তে আপনার ডিভাইসে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলমান থাকলে তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া অনেক সময় রেঞ্জ এক্স টেন্ডারটির প্রভাইডেড নেটওয়ার্ক এর ব্যান্ডউইথ কম হওয়ায় ইন্টারনেট এর পুরোপুরি গতি আমরা ব্যাবহার করতে পারি না। কিন্তু একটি মেশ রাউটারের ক্ষেত্রে এমন টা ফেস করা লাগে না। আপনি যেখানেই মুভ করেন না কেনো একটি রাউটারেই কানেক্টেড থাকে আপনার ডিভাইস টি যার কারনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন কিংবা গতি কম হওয়ার সুযোগ থাকে না। 

  • সেলফ হিলিং -

ধরুন আপনি আপনার মেশ নেটওয়ার্ক সিস্টেমের কোনো একটি নির্দিষ্ট নোডের রেঞ্জের আওতায় আছেন। হঠাৎ করে সেই নোড কোনো ত্রুটির কারণে অকার্যকর হয়ে পড়ল। মেশ সিস্টেমটির অন্য যে নোডটি আপনার সবচেয়ে কাছে থাকে, সেটি আপনার ডিভাইসের সঙ্গে তাৎক্ষণিক সংযুক্ত হয়ে আপনার নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করে। মেশ সিস্টেমের এভাবে স্বয়ংক্রিয় সংযোগ স্থাপনকেই সেলফ হিলিং বলা হয়।

এছাড়া মেশ রাউটারের আরও কিছু সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মেশ নেটওয়ার্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাকে সবচেয়ে গতিসম্পন্ন নোডের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয়। ধরেন, আপনি যদি দুটি নোডের নেটওয়ার্কের আওতায় আছেন, এসময় আপনি যে নোডটি থেকে সবচেয়ে বেশি গতির ইন্টারনেট পাবেন, আপনাকে সেটির সঙ্গেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত করে দিবে এই সিস্টেমটি।

এগুলো ছিলো একটি মেশ রাউটার কি এবং এটি ব্যাবহারে আপনি কি কি সুবিধা পেতে পারেন তার কিছু ধারনা। তো, হোপফুলি একটি সাধারন রাউটার এবং একটী মেশ রাউটারের মধ্যে কোনটি আপনার জন্য বেটার হবে এটি আপনি নিজেই যাচাই করতে পারবেন।